Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার

স্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় আগাছানাশকের সুষ্ঠু ব্যবহার
কৃষিবিদ মোহাম্মদ সাইফুল আলম সরকার
মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত সুজলা-সুফলা আমাদের বাংলাদেশ। আমাদের এই ছোট্ট দেশটিকে আজকের অবস্থানে আসতে কৃষি, কৃষক এবং  কৃষিবিজ্ঞানী রেখেছে অসামান্য অবদান। স্বাধীনতার ঠিক পরবর্তী সময়ে যেখানে সাত কোটি মানুষের দু’বেলা খাবারের চাহিদা মেটানো এক দুঃস্বপ্ন ছিল সেখানে বিগত পঞ্চাশ বছর যাবত প্রতিনিয়ত কমে আসা চাষযোগ্য জমিতে ষোল কোটি মানুষের খাবারের চাহিদা মিটিয়ে  বাংলাদেশ আজ একটি খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কৃষিতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষির ধরনও আমূল পাল্টে গেছে। নিকট অতীতেও ফসলের বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতি ধাপই ছিল পুরোপুরি শ্রমনির্ভর, যা বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের আধুনিক যন্ত্রের কল্যাণে যান্ত্রিক কৃষিতে রূপান্তর। বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশকের সমন্বয়ে  আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রতি একক জমি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশ সময় সাশ্রয়ীও বটে।
ফসলে রোগব্যাধি ও পোকামাকড়ের পাশাপাশি আগাছাও বেশ ক্ষতিসাধন করে থাকে। বাংলাদেশ জার্নালস অনলাইন নামক একটি গবেষণা জর্নালে প্রকাশিত কৃষিতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ময়মনসিংহের সদর উপজেলায় পরিচালিত এক মাঠ গবেষণায় দেখা যায় যে, ঐ এলাকায় ধান ও গমক্ষেতে যথাক্রমে ২৫ ও ২৯ ধরনের আগাছা থাকে (সূত্র: ঔ. ইধহমষধফবংয অমৎরষ. টহরা. ১৫(২): ১৪৮-১৫৭, উবপবসনবৎ ২০১৭)। একই বিভাগ কর্তৃক সিরাজগঞ্জের পাঁচ উপজেলায় আটটি ফসলের মাঠে পরিচালিত আরেক গবেষণায় ৪০ ধরনের বিভিন্ন আগাছা শনাক্ত করা হয়। উক্ত গবেষণায় বলা হয় যে, আগাছার কারণে ফসলের উৎপাদন প্রায় ৮-৫১ শতাংশ পর্যন্ত কম হতে পারে (সূত্র: উঙও: ১০.৫৪৫৫/ঔইঅট.৭৬১২৩)। যদিও ফসলের মাঠে বিভিন্ন ধরনের আগাছার এই পরিসংখ্যান এলাকাভেদে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে কিন্তু এ বিষয়টি পরিষ্কার যে, আগাছা সব ধরনের ফসল উৎপাদনের জন্যই একটি প্রতিবন্ধকতা।
ফসলের মাঠে আগাছা দমনের বিষয়টি এক সময় ছিল সম্পূর্ণ শ্রমনির্ভর ও সময় সাপেক্ষ ব্যাপার যা সময়ের পরিক্রমায় পাল্টে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্পকারখানায় নানামুখী কর্মসংস্থানের ফলে কৃষি শ্রমিকের বিরাট একটি অংশ পেশা বদলে এসব শিল্পকারখানায় কাজ করছে।  প্রধানত কৃষি শ্রমিকের অপ্রতুলতার পাশাপাশি তুলনামূলক কম খরচে, উচ্চ কার্যকারিতা এবং সময়মত আগাছা নিয়ন্ত্রণে কারণে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনের খরচ কমেছে।   
বাংলাদেশে ব্যবহৃত মোট বালাইনাশকের পরিমাণ ৩৯.৫৪ হাজার মে. টন যার মধ্যে আগাছানাশকের পরিমাণ ৭.৮৮ হাজার টন (বিবিএস, ২০২১, চিত্র: ১)। আগাছানাশক ব্যবহারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে কৃষিতে ব্যবহৃত মোট বালাইনাশকের প্রায় এক পঞ্চমাংশ আগাছানাশক অথচ ১৯৮৬-৮৭ সালে আগাছানাশক ব্যবহারের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০৮ মে. টন (বিবিএস,১৯৯১)। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গবেষণায় সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে ফসলের মাঠে প্রয়োগকৃত রাসায়নিক বালাইনাশক  মাটি, পানি, বাতাস, স্থলজ ও জলজ উদ্ভিদ ইত্যাদির উপর ব্যাপক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য শুধু উৎপাদনের কথা খেয়াল করে বর্তমান কৃষির নিত্যঅনুষঙ্গ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক আগাছানাশক ফসলে প্রয়োগ করে অল্প সময়ে অল্প খরচে অধিক  ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের চারপাশের স্থলজ ও জলজ পরিবেশ তথা গোটা বাস্তুতন্ত্রের কথা ভুলে যাচ্ছি।
মাটিতে  বিভিন্ন প্রকারের উপকারী অণুজীবের উপস্থিতি উদ্ভিদের অস্তিত্বের জন্য একান্ত অপরিহার্য। বাংলাদেশ ধান গবেষেণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক ২০১৫-১৬ সালে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে মাটিতে উপস্থিত সবধরনের উপকারী অনুজীবের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কেরালা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষামতে, আগাছানাশক ব্যবহারের ফলে প্রকৃতির লাঙল কেঁচোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে কমে যাওয়ার পাশাপাশি তিন সপ্তাহের মধ্যে মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন অনুজীবের সংখ্যা প্রায় ৫৬ শতাংশ হ্রাস পায়। কিছু কিছু আগাছানাশক এমন আছে যেগুলো মাটিতে দীর্ঘদিন পর্যন্ত উপস্থিত থাকে যেমন:- অ্যামিনো মিথাইল ফসফোনিক এসিড (এএমপিএ)। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষণা মতে এসব আগাছানাশক জলজ পরিবেশের জন্যও হুমকিস্বরূপ। শুধুমাত্র বাংলাদেশই নয় বরং সারা বিশ্বেজুড়ে ফসলের মাঠে আগাছানাশক মাটি ও পানিকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। কয়েকটি দেশের মাটি ও পানিতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের আগাছানাশকের পরিমাণ টেবিল দ্রষ্টব্য।
বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা মানবগোষ্ঠী জীবনধারার স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মান রক্ষা করা, বিশেষত উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যার উপর কি প্রভাব ফেলতে পারে বিশ্বজুড়ে এরুপ বেশ কিছু গবেষণা চলমান আছে। গ্লাইফসফেট বিশ্বজুড়ে বহুল ব্যবহৃত একটি আগাছানাশক। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা মতে গ্লাইফসফেট একটি কারসেনোজেনিক রাসায়নিক দ্রব্য যা ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য ব্যাপকভাবে দায়ী। ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রির্সাচ অন ক্যান্সার, ফ্রান্সের  গবেষণায় এটি সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়েছে যে, গ্লাইফসফেট প্রাণীদেহের ডিএনএ এর কার্যকারিতা নষ্ট করে ক্যান্সার তৈরি করতে সাহায্য করে। ইউরোপিয়ান কেমিক্যাল এজেন্সির মতে গ্লাইফসফেট চোখের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি জলজ প্রাণির জন্য হুমকিস্বরূপ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সাইন্স, বেঙ্গালুরের তথ্য মতে, গ্লাইফসফেট  পিটুইটারি গ্ল্যান্ডের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করে। এজন্য বিশ্বের ৩৫টি দেশে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
বিশেষত উন্নয়নশীল দেশে আগাছানাশক প্রয়োগের সময় যথেষ্ট নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করার কারণে কৃষকরা বেশ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে উন্নয়নশীল দেশের ২৮.৯ শতাংশ মানুষ আগাছানাশক পরিবহন, সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সময় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকে। তাছাড়া অবশিষ্ট মানুষের অধিকাংশই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করে কিভাবে নিরাপদে আগাছানাশক প্রয়োগ করবে এ ব্যাপারে কোন ন্যূনতম প্রশিক্ষণও পায় না।
ফসল বিশেষত, শাক ও সবজি উৎপাদন করতে নির্বিচারে ব্যবহৃত এসব আগাছানাশক গোটা পরিবেশ তথা বাস্তুতন্ত্রের পাশাপাশি আমাদের পুরো খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থাকেই বিষাক্ত করে তুলছে। যেমন: নিড়ানি ছাড়া রাসায়নিক উপায়ে পাটের আগাছা দমন করতে গিয়ে বর্তমানে গ্লুফোসিনেট অ্যামোনিয়াম, ইথোক্সি সালফুরান, ফেনক্সপপ-পি ইথাইল ব্যবহারের ফলে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ পাটশাকও অনিরাপদ হয়ে গেছে। ফলে বন্ধ্যাত¦তা, লিভার, কিডনি, ফুসফুসের ক্যান্সার ও মানসিক প্রতিবন্ধীতাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১.৫ মিলিয়ন।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য এখনই সময়। কৃষিতাত্ত্বিক উপায়ে আগাছা দমন যেমন: ভালভাবে জমি চাষাবাদ, উপযুক্ত সময় নির্বাচন, শস্য আর্বতন ইত্যাদি হল প্রচলিত পদ্ধতির আগাছা দমন ব্যবস্থা। অধিকাংশ সবজি ফসলেই মালচিং ব্যবহার করা সম্ভব এবং ফলশ্রুতিতে একদিকে যেমন সহজে আগাছা দমন হয় অন্যদিকে ইউরিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও পানির  বাষ্পীভবন রোধ করে ফসল উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব। এছাড়া পলিথিন মালচিং মাটিতে উপস্থিত বিভিন্ন উপকারী অনুজীবের কার্যকারিতা বৃদ্ধির করে। পলিথিন মালচিংয়ের আরেকটি সুবিধা হল এটি একাধিকবার ব্যবহার করা যায়।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভেষজ নির্যাস ও অনুজীব বিশেষত ছত্রাক জৈব আগাছানাশক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন উদ্ভিদের অ্যালকোহলিক ও ফেনলিক নির্যাস ফসলি জমির আগাছাকে উল্লেখযোগ্যভাবে দমন করতে পারে যেমন: ঝ. নরপড়ষড়ৎ, ঈুহধৎধ পধৎফঁহপঁষঁং, ইৎধংংরপধ হরমৎধ, ঈরংঃঁং ষধফধহরভবৎ ইত্যাদি উদ্ভিদের নির্যাস ধান সয়াবিনসহ বেশ কিছু ফসলের আগাছা কার্যকরভাবে দমন করতে পারে। তেমনি কিছু সংখ্যক ছত্রাকও যেমন:  অংপড়পযুঃধ ধমৎড়ঢ়ুৎরহধ, ঋঁংধৎরঁস ভঁলরশঁৎড়র, চযড়সধ যবৎনধৎঁস আগাছা দমনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে (সূত্র: যঃঃঢ়ং://ফড়র.ড়ৎম/১০.৩৩৯০/ঢ়ষধহঃং১০০৬১২১২)। তবে ব্যাপক পরিসরে এধরনের জৈব আগাছানাশক ব্যবহার করতে হলে এ বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়াও সরকারের নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যেন, পর্যাপ্ত যাচাই বাছাই ব্যতীরেখে কোন প্রকার রাসায়নিক আগাছানাশক আমদানি করতে না পারে। এক কথায়, ফসল উৎপাদক তথা কৃষক, ভোক্তা, কৃষি গবেষক ও সরকার সকলের সম্বনিত আন্তরিক প্রচেষ্টাই পারে আমাদের আগামীর কৃষিকে অধিকতর নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও সুসংহত করতে।

লেখক : বিজ্ঞানী (ফলিত গবেষণা), পাট বিষয়ক মৌলিক ও ফলিত গবেষণা প্রকল্প, পাটের কৃষি পরীক্ষা কেন্দ্র, জাগীর, মানিকগঞ্জ, মোবাইল: ০১৬৯০-০৫৭৫৭৭, ইমেইল:saiful.barj@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon